বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম - বিটরুট জুস এর উপকারিতা। বিস্তারিত জানুনড্রাগন ফল নিয়ে অনেক প্রশ্ন হয়ত আপনার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, এই যেমন ড্রাগন ফলের
উপকারিতা ও অপকারিতা কি, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি ইত্যাদি। চিন্তার কোন কারণ
নেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা।
সাথে আরো আলোচনা করতে যাচ্ছি ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা, ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক সহ ড্রাগন ফল সম্পর্কিত আরো অনেক বিষয়। সুতরাং আর্টিকেলটি শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং জেনে নিন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।
সুচিপত্রঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ভুমিকা
ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল যার অনেক উপকারিতা ও ঔষধি
গুন রয়েছে, যেমন ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ডায়াবেটিকস কন্ট্রোল করতে
সহায়তা করে ইত্যাদি। এর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পরতে থাকুন।
ড্রাগন ফল
দেখতে লালচে গোলাপি এই ফলটির নাম ড্রাগন ফল। যা আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষায় পিতায়া
নামেও পরিচিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম "Hylocereus undatus"। এটি একটি ফণীমনসা
প্রজাতির ক্যাকটাস প্রজাতির উদ্ভিদের ফল। দেখতে অনেকটা ড্রাগনের মত দেখায় বলে এই
ফলটি ড্রাগন ফল নামে অধিক পরিচিত।
লাল এবং সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
অনেক পুষ্টি গুনে গুণান্বিত এই ফলটি দিন দিন আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলটি আমাদের শরীর কে সুস্থ এবং ডিহাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সজীব রাখে। নিচে ড্রাগন ফলের কিছু
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করে হলো।
কোলেস্টেরল কমায়: ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে
সহায়তা করে। দেহের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে
ড্রাগন ফল হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আপনারা যারা অনেকদিন যাবত
কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন, অনেক কিছু ট্রাই করেছেন কিন্তু কোন উপকার পাচ্ছেন
না তারা দৈনিক অন্তত একটি করে ড্রাগন ফল খেয়ে দেখতে পারেন।
১০০ জন মানুষের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে মাত্র একটি করে ড্রাগন ফল
খেয়েছেন তাদের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ ৪.৪% অপরদিকে যারা একটিও ড্রাগন ফল
খায়নি তাদের রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ ৯.৪%।
হৃদপিণ্ডের জন্য খুব উপকারি: দেহের কোলেস্টেরল কমিয়ে ড্রাগন ফল হৃদযন্ত্র
সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফল শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল প্রসারিত করে রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। হৃদযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং
হৃদরোগ এর ঝুঁকি অনেক আংশেই কমিয়ে দেই।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ড্রাগন ফল ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যারোটিন যা
মানব শরীরের অনাকাঙ্ক্ষিত কোষ টিউমার ইত্যাদি ধ্বংস করে। শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত কোষ
তৈরিতে বাধা দিয়ে শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মরণ ব্যাধি ক্যান্সার
থেকে বাচতে আমাদের অন্তত দিনে একটি করে হলেও ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: সুস্বাদু এই ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায়
এটি শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহের শর্করা
নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি অনেক আংশেই কমিয়ে দেই।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ত্রন: আমাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। অনেক ঔষধ
খেয়ে চিকিৎসা করেও তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ড্রাগন ফল দেহের ব্লাড
ভেসেল প্রসারিত করে দেহের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। হেদের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমান
নিয়ন্ত্রন করে যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ অনেক আংশেই কমে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রন: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন C যা দেহের বাড়তি
ওজন কমিয়ে দেহকে স্টেবল রাখতে সহায়তা করে। ৮০ শতাংশের বেশি পানি থাকায় ফলটি
আপনাকে ডি হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি: প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ড্রাগন ফল খেলে আমাদের
পরিপাক যন্ত্র ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। ফলসরূপ বদ হজম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ফাইবার আমাদের পরিপাক যন্ত্রের বর্জ্য নিষ্কাশনে সহায়তা করে যার ফলে কোষ্ঠ
কাঠিন্য থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
স্কিন উজ্জ্বল করে: ড্রাগন ফল ফলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের স্কিনকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করে। বয়সের ছাপ দূর
করে এবং স্কিনকে উজ্জ্বল করে। আমাদের উচিত কেমিক্যাল জাতিয় প্রোডাক্ট ব্যাবহার না
করে অর্গ্যানিক জিনিস ব্যাবহার করা।
আয়রনের ঘটতি মেটায়: হাতে গোনা কিছু ফল রয়েছে যেগুলোর মধ্যে আয়রনের
উপস্থিতি রয়েছে তার মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি
করে যা আমাদের দেহের প্রতিটি টিসুতে অক্সিজেন পৌছনোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। যদি
সঠিক মাত্রায় আমাদের শরীরে আয়রন তৈরি না হয় তাহলে আমাদের শরীর রক্ত স্বল্পতায়
ভুগে। আপনাদের মধ্যে যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন একটি করে ড্রাগন
ফল খেয়ে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কিওয়ার্ড কি ? অভিজ্ঞদের কাছে জানুন
চুলপড়া রোধ: ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন E, যা আমাদের চুল পড়া রোধ করে চুলের
গোঁড়া শক্ত করে এবং খুসকি দূর করে। আয়রনের ঘাটতির জন্যেও আমাদের মাথার চুল পরে,
এতে থাকা আয়রন শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এ সমস্যার সমাধান করে।
লাল এবং সাদা ড্রাগন ফলের অপকারিতা - ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক
সর্বগুণে গুণান্বিত এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা থাকলেও এর কিছু পরিমাণে
অপকারিতা রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে শরীরে এলার্জি দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগন ফল ফল খেলে ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ড্রাগন ফল
যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ কমায় সেহেতু যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা যদি ড্রাগন ফল
ফল খান তাহলে তাদের রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
ড্রাগন ফলের খোসায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি। আপনি এগুলোকে ছোট ছোট করে
কেটে গরম পানির সাথে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন। ড্রাগন ফলের খোসাকে বেটে
স্কিনে লাগাতে পারেন ড্রাগন ফলের খোসা মুখের ব্রণ মেছতা দূর করতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফলের যে সমস্ত উপকারিতা রয়েছে ড্রাগন ফলের খোসাতেও প্রায় তার সমপরিমাণ
উপস্থিত থাকে।
সেজন্য ড্রাগন ফল খেলে যে সমস্ত উপকার পাবেন ড্রাগন ফলের খোসা খেলেও সে সমস্ত
উপকার পাওয়া যাবে। শুধু সমস্যা হচ্ছে টেস্ট। ড্রাগন ফল সুস্বাদু হলেও এর খোসা
তেমন সুস্বাদু নয়। ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে বানানো চায়ের স্বাদ অনেক টা শসার
জুসের মত। অনেকেই ড্রাগন ফলের খোসা রান্না করেও খেয়ে থাকেন। রান্না করলে ড্রাগন
ফলের খোসা অনেকটা আঠালো স্পঞ্জের মতো লাগে।
খেতে খারাপ হলেও অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় এর স্বাদকে মেনে নেওয়ায় যায়। অনেকটা
ঔষধের মত। ঔষধের স্বাদ খারাপ হওয়ার পরেও এটা আমাদের খেতে হয় কারণ এটা আমাদের
প্রয়োজন। তেমনি ড্রাগন ফলের খোসার স্বাদ খারাপ হলেও এটি আমাদের শরীরের জন্য
অত্যন্ত উপকারী।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে অনেক জিনিস খেতে নিষেধ করা হয় যেমন আনারস, পেঁপে
ইত্যাদি। কিন্তু মা ও শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ড্রাগন ফল
খেতে কোন নিষেধ নেই বরং এটি গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গর্ভাবস্থায়
একজন নারীর প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ওমেগা ৩ এসিড এর প্রয়োজন হয় যার ঘাটতি পূরণ
করতে গর্ভবতীদের বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেতে হয়।
কেমিক্যাল যুক্ত ঔষধ না খেয়ে একজন গর্ভবতী নারী যদি প্রতিদিন একটি করে ড্রাগন ফল
খান তাহলে অর্গ্যানিকভাবে তার আয়রন ও ওমেগা ৩ এসিড এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। যা
নবজাতক শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও সঠিক ওজন ধারণে সহায়তা করবে।
লেখকের মন্তব্য
এতক্ষণ ধরে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করলাম। আপনাদের মধ্যে
অনেকেই আছেন যারা ড্রাগন ফল খেতে খুব পছন্দ করেন তাদের জন্য উপরের বিষয় গুলি
জানা অত্যন্ত জরুরি। প্রচুর পুষ্টি গুনে গুণান্বিত এই ফলটি আমাদের নিয়মিত ও
পরিমাণ মত খাওয়া উচিত। মাত্রাতিরিক্তও না এবং একদম কমও না।
আশা করছি আপনি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই
আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে এই ওয়েব সাইটের অন্য আর্টিকেলগুলি পড়তে
পারেন। এতক্ষণ ধরে এই আর্টিকেলটি পড়ার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ , আশা করছি আপনি
ম্যাজিক টেক আইটির সাথেই থাকবেন !!
ম্যাজিক টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url